বিশ্বজুড়ে
অ্যামাজন রক্ষায় সাত দেশের চুক্তি সই
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ অ্যামাজনের নদী অববাহিকা রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার সাতটি দেশ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গ্রীষ্মপ্রধান বন অ্যামাজনে রেকর্ড সংখ্যক আগুনে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের মধ্যে বনায়ন নিয়ে কাজ করার জন্য এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে তারা। কলম্বো শীর্ষ সম্মেলনে এ চুক্তিতে বলিভিয়া, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, গায়ানা, পেরু ও সুরিনাম স্বাক্ষর বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
১৫ আগস্ট থেকে জ্বলছে ব্রাজিলের অ্যামাজন জঙ্গল। এবছর এখন পর্যন্ত ব্রাজিলে প্রায় ৮০ হাজার আগুনের ঘটনা শনাক্ত হয়েছে। এর অর্ধেকেরও বেশি আগুনের ঘটনা ঘটেছে অ্যামাজন বনাঞ্চলে। পরিবেশবীদরা দাবি করছেন, এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা মানবসৃষ্ট। কৃষির জন্য জমি পরিষ্কার ও পশু চারণের জন্য বনে আগুন লাগানো হচ্ছে। আর এদের সমর্থন দিচ্ছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারো। বিভিন্ন স্থানে নতুন করে আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর কেন্দ্রীয় সরকারের শরণাপন্ন হয়েছে ছয়টি রাজ্য। বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ রকমের আগুনের কুণ্ডলী তৈরি হয়েছে। এসব রাজ্যের কর্তৃপক্ষ আগুন নিয়ন্ত্রণে সামরিক বাহিনীর সহায়তা চাইছে। এরমধ্যে রন্ডোনিয়া প্রদেশে ইতোমধ্যেই সামরিক বাহিনীর বিমান থেকে পানি ঢালার কাজ চলছে।
কলম্বো সম্মেলনে দক্ষিণ আমেরিয়ার সাতটি দেশ নতুন বনায়নে কাজ করতে সম্মত হয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তিতে দুর্যোগ মোকাবিলা নেটওয়ার্ক ও স্যাটেলাইট নজরদারির কথা বলা হয়েছে। কলম্বোর লেটিসিয়া শহরে এ শীর্ষ সম্মেলন আহবান করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইভান দুকে। তিনি বলেন, ‘বৈঠকটি বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ অ্যামাজন অঞ্চলের প্রেসিডেন্টের মধ্যে সমন্বয় সাধনের ব্যবস্থা করবে।’
পেরুর প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভিজকারা বলেছেন, ‘কেবল শুভেচ্ছা জানানোই এখন আর যথেষ্ট নয়।’ এ সময় তারা শিক্ষা ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের ভূমিকা বাড়ানোর ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রচেষ্টা চালাতে রাজি হয় এ সাতটি দেশ।
দক্ষিণ আমেরিকার এ সাতটি দেশের প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং মন্ত্রীরা লেটিসিয়ার এ সম্মেলনে নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। অস্ত্রোপচারের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ায় সম্মেলনে হাজির উপস্থিত থাকতে পারেননি ব্রাজিলের ডানপন্থী রাষ্ট্রপতি জেইর বলসোনারো। এজন্য ভিডিওলিঙ্কের মাধ্যমে সম্মেলনে অংশ নেন তিনি।
সম্প্রতি রেইনফরেস্ট সংরক্ষণের কারণেই ব্রাজিলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দাবি করার পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। এর আগে তিনি বলেন, অ্যামাজনে আগুন লাগার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশকারী ইউরোপের দেশগুলো তাদের নিজেদের পরিবেশের অনেক ক্ষতি করেছেন। তাই তাদের নিজেদের বনায়ন করার ওপর তাদের জোর দেওয়া উচিত।
ব্রাজিলের জাতীয় ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিচার্স জানায়, আগস্টে ব্রাজিলের অ্যামাজনে ৩০ হাজার ৯০১টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। যা ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত এক মাসে সর্বোচ্চ।
ব্রাজিলের অরণ্য বিনাশ পর্যবেক্ষণকারী গ্রুপ ম্যাপবায়োমাস-এর সমন্বয়ক তাসো আজেভেদো বুধবার সতর্ক করে বলেন, ‘আগুনের সবচেয়ে খারাপ ঘটনাটি এখনও আসেনি।’ এবছর এখন পর্যন্ত ব্রাজিলে প্রায় ৮০ হাজার আগুনের ঘটনা শনাক্ত হয়েছে। এর অর্ধেকেরও বেশি আগুনের ঘটনা ঘটেছে অ্যামাজন বনাঞ্চলে। বন উজাড়করণ বন্ধ করতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ভূমি দখলদার, স্বর্ণ খনি ব্যবসায়ী ও গাছ চুরির সঙ্গে জড়িত অপরাধীরাই এই বন উজাড়করণের সঙ্গে জড়িত।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যা দেখছি তা একটি আসল সংকট। তাৎক্ষণিকভাবে এই আগুন যদি বন্ধ করতে না পারি তাহলে বর্তমানের থেকে আরও আগুন অনেক বড় ও বেশি হয়ে ট্র্যাজেডিতে পরিণত হতে পারে।’