দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম
অবশেষে ডিআইজি মিজান গ্রেফতার
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: তিন কোটি ২৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় পুলিশের বরখাস্ত হওয়া উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের আগাম জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এখনই কাস্টডিতে (হেফাজতে) নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পুলিশের রমনা বিভাগের কর্মকর্তারা তাঁকে এখন হেফাজতে নেবেন। এ ছাড়া তাঁর ভাগ্নে উপপরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসানকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ সোমবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালত বলেন, ডিআইজি মিজান পুলিশ প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন।
আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান, ডিআইজি মিজানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাফি আহমেদ এবং এসআই মাহমুদুল হাসানের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম।
আজ দুপুরের আগেই হাইকোর্টে আসেন ডিআইজি মিজান। বিকেল ৩টার পর ডিআইজি মিজানের জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়। শুনানিকালে আদালতে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংস্থার লোকজন, উৎসুক সাধারণ মানুষ, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের উপস্থিতি ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। এ সময় ডিআইজি মিজান আদালতের সামনে আকাশি রঙের শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা অবস্থায় দাঁড়ানো ছিলেন। তাঁর সামনে ছিলেন আইনজীবীরা।
শুনানির শুরুতে ডিআইজি মিজানুর রহমানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মমতাজউদ্দিন আহমদ মেহেদী বলেন, ‘মাই লর্ড পুলিশের এ (মিজানুর রহমান) কর্মকর্তা ভেরি অনেস্ট, তিনি জঙ্গি নির্মূলে কাজ করে গেছেন, পুলিশে তাঁর অনেক উজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। তিনি মিশনেও কাজ করেছেন। তিনি জামিন পেলে পলাতক হবেন না।’
এরপরই আদালত বলেন, ‘আমরা জামিন দিব না।’ আদালত বলেন, ‘তিনি পুলিশের ভাবমূর্তি পুরোপুরি নষ্ট করেছেন। আমরা টিভিতে দেখেছি, (দুদকের একজন পরিচালককে) ঘুষ দেওয়ার ব্যাপারে সে ডেসপারেট বক্তব্য দিয়েছে। পুলিশ বিভাগের ইমেজ ধ্বংস করেছেন। যেটা পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে কাম্য নয়। সে শুধু নিজের প্রতিষ্ঠানের নয়, আরো একটি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে।’
এরপর আদালত বিকেল ৪টার দিকে আদেশে বলেন, পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (সাময়িক বরখাস্ত) মিজানুর রহমানের আগাম জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হলো। একই সঙ্গে এখনই কাস্টডিতে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পুলিশের রমনা বিভাগের কর্মকর্তারা তাঁকে এখন হেফাজতে নেবেন। এছাড়া তাঁর ভাগ্নে এসআই মাহমুদুল হাসানকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এরপর জামিনের পূর্ণাঙ্গ আদেশ প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত আদালতের ভেতরে তাঁকে অবস্থান করতে বলা হয়। এরপর বিকেল পৌনে ৬টার দিকে রায়ের কপি নিয়ে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
আদেশের পর আদালতে দুদকের পক্ষের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধানকালে প্রাথমিক অভিযোগ পাওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দুদক একটি মামলা করেছে। নিজের অপরাধকে ঢাকার জন্য ঘুষ লেনদেন করে ফৌজদারী অপরাধ করেছেন। আবার ঘুষ লেনদেনের নামে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন ঘুষের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছে।
এর আগে তিন কোটি ২৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় আগাম জামিন আবেদন করেন মিজানুর রহমান। তাঁর পক্ষে আবেদনটি করেন আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান।
গত ১৯ জুন মিজানুর রহমানের স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং ব্যাংক হিসাবের লেনদেন বন্ধ করার নির্দেশ দেন আদালত।
নারী নির্যাতনের অভিযোগে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার হওয়া ডিআইজি মিজানুর রহমানের অবৈধ সম্পদের তদন্ত শুরু করেছিল দুদক। কিন্তু এই তদন্ত করতে গিয়ে দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মিজানুর রহমান।
গণমাধ্যমে বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পরপর এনামুল বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। যদিও পরিচালক এনামুল বারবার দাবি করেন, রেকর্ডকৃত বক্তব্যে তাঁর কণ্ঠ নকল করে বানানো। আর এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পৃথক অনুসন্ধান টিম গঠন করে দুদক।