দেশজুড়ে
অনিশ্চয়তায় দেড় কোটি নাগরিকের ‘স্মার্টকার্ড’
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়ত্র (এনআইডি) বা স্মার্টকার্ড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অবার্থার টেকনোলজিসকে চুক্তিভঙ্গের দায়ে জরিমানা আদায় করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। উল্টো ব্ল্যাংক স্মার্টকার্ড (যে কার্ডে তথ্য ইনপুট করা হয়) আটকে রেখেছে ফরাসি প্রতিষ্ঠানটি। যে কারণে প্রায় দেড় কোটি নাগরিক সহসা স্মার্টকার্ড পাচ্ছেন না।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সময়মতো ফাঁকা কার্ড সরবরাহ না করায় স্মার্টকার্ড বিতরণের কার্যক্রম এরইমধ্যে ঝুলে গেছে। চুক্তি অনুযায়ী, অবার্থার সময়মতো কার্ড সরবরাহ না করলে জামানতের টাকা ফেরত না পাওয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন সে টাকা আটকে দিলে প্রতিষ্ঠানটি ফরাসি দূতাবাসের মাধ্যমে বিভিন্ন মহলে তদবির শুরু করে দেয়। তারা কারণ দেখায় ব্ল্যাংককার্ড সব তৈরি করা হয়েছে। যার মধ্যে সরবরাহের বাকি আছে ১ কোটি ৩৪ লাখ কার্ড। আর কার্ডগুলো নিয়ে তারা তাদের ব্যয় মেটানোর পরিশোধের দাবি তোলে। আর এজন্য তাদের পরিশোধ করতে হবে ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা দুইশ কোটি টাকার বেশি।
জানা গেছে, সব কার্ড বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য অবার্থারকে মোট ২৫ বার তাগাদা দিয়েও যখন সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন হার্ডলাইনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। অবশেষে কার্ড সরবরাহ করতে না পারার কিছু কারণ ব্যাখ্যা করে ফরাসি প্রতিষ্ঠানটি। নির্ধারিত সময়ে কার্ড সরবরাহ করতে না পারায় চুক্তির মেয়াদ না বাড়িয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করে নির্বাচন কমিশন। একইসঙ্গে আইনজীবী নিয়োগ করে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। পরে জামানতের প্রায় ২শ কোটি টাকা আটকে দেয় ইসি।
এ বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সংবাদমাধ্যমে বলেন, অবার্থারকে টাকা ছাড় করে কার্ড বুঝে নিতে একটু আইনি জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। একটি পক্ষ টাকা ছাড় না করতে মামলা করেছে। আমরা আইনি লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আদালতের একটি নির্দেশনা আছে অর্থ পরিশোধ না করার জন্য। আমরা আপিল করবো।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, চুক্তি অনুযায়ী সময়মতো কার্ড দিতে না পারায় অবার্থারের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উল্টো অবার্থারই এখন বেকায়দায় ফেলেছে। বলছে, তাদের ব্ল্যাংককার্ড তৈরিতে যে ব্যয় হয়েছে, সেটা না দিলে কার্ড দেবে না। তাই প্রায় দেড় কোটি নাগরিকের স্মার্টকার্ড প্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
২০১১ সালে ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর অ্যানহেন্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিস (আইডিইএ)’ প্রকল্পের মাধ্যমে সে সময়কার ৯ কোটি ভোটারকে স্মার্টকার্ড দেওয়ার জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছিল এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।
সেই ৯ কোটি ভোটারের মধ্যে বর্তমানে সাত কোটি নাগরিকের স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম চলমান রেখেছে ইসি। বাকি নাগরিকের কার্ড কেবল সেই ব্ল্যাংক কার্ডগুলো পেলেই তথ্য ইনপুট করে বিতরণ করতে পারবে সংস্থাটি।
দেশে ভোটার রয়েছেন ১০ কোটি ৪৮ লাখের মতো। সেই ৯ কোটির বাইরে নতুন দেড় কোটি ভোটার ও ভবিষ্যতে সব নাগরিককে স্মার্টকার্ড দেওয়ার নতুন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সরকারের তহবিল থেকেই এই ব্যয় মেটানো হবে।