প্রধান শিরোনামবিশ্বজুড়ে
অনলাইন অ্যাপে মুসলিম নারীদের বিক্রির বিজ্ঞাপন
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ অনেক মুসলিম নারী হঠাৎ দেখতে পান অনলাইনে বিক্রির জন্য তাঁদের নিলামে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে অনেককে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে দিল্লি পুলিশ তদন্ত করছে বলে আরব নিউজের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। পেশাদার পাইলট হানা মোহসিন খানও অন্য অনেকের মতো হঠাৎ ওই নিলামের বিজ্ঞাপনে নিজেকে আবিষ্কার করেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে হানা খান বলেন, তাঁর এক বন্ধু তাঁকে একটি টুইট ফরোয়ার্ড করে এ ঘটনা জানান। টুইটের ওই লিংকে ক্লিক করার পর সেই লিংক তাঁকে সুল্লি ডিলস নামে একটি অ্যাপ এবং তাদের ওয়েবসাইটে নিয়ে যায়। সেখানে ঢুকে তিনি দেখতে পান কয়েকজন পরিচিতসহ অনেক নারীর ছবি দিয়ে লেখা রয়েছে আজকের ডিল, অর্থাৎ তাদের আজ বিক্রি করা হবে।
হানা খান প্রথমেই অ্যাপটির যে পেজে ঢোকেন, সেখানে ছিল অচেনা এক নারীর ছবি। পরের দুই পাতায় তিনি তাঁর কয়েক বন্ধুর ছবি এবং প্রোফাইল দেখতে পান। তার পরের পাতাতেই দেখতে পান তাঁর নিজের ছবি এবং পরিচিতি। এ নিয়ে হানা খান বলেন, ‘আমি নিজে ৮৩টি নাম গুনেছি। আরও হয়তো থাকতে পারে। তারা আমার ছবি নিয়েছে আমার টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে। কারণ ছবির সঙ্গে আমার টুইটারের ইউজার-নেম ছিল।’
ওই অ্যাপে ব্যবহারকারীদের বলা হয়, অনলাইনে একজন সুল্লি কেনার এখনই সুযোগ। ভারতে উগ্র হিন্দুদের অনেক ট্রলে মুসলিম নারীদের অবমাননা করতে সুল্লি শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
জানা গেছে, অ্যাপে আসলে কোনো অকশন বা নিলাম হয়নি। অ্যাপটি খোলার আসল উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম নারীদের ছোট করা, অপমান করা, অপদস্থ করা।
এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার দিল্লিতে একটি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে শনিবার দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র চিন্ময় বিশ্বওয়াল বলেন, ‘আমরা একটি মামলা করেছি এবং এ ঘটনার তদন্ত করছি।’
ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া সমন্বয়কারী হাসিবা আমিন বলেন, যারা অ্যাপটি তৈরি করে অনলাইনে ছেড়েছে, তারা নকল নাম-পরিচয় ব্যবহার করেছে। অনলাইনে মুসলিম নারীদের অপদস্থ করার এ রকম ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ১৩ মে ঈদুল ফিতরের দিন ইউটিউবের একটি চ্যানেলে ‘ঈদ স্পেশাল’ নামে এক অনুষ্ঠান হয়, যেখানে ভারত ও পাকিস্তানের মুসলিম নারীদের নিলামে তোলা হয়েছিল।
হাসিবা আমিন মনে করেন, টুইটারে যারা তাঁকে নিলামে তুলেছিল, তারাই সুল্লি ডিলস অ্যাপ এবং ইউটিউবের ওই চ্যানেল খোলার পেছনে রয়েছে। ইউটিউবের ওই চ্যানেলটি পরে সরিয়ে নেওয়া হয়।
সুল্লি ডিলস অ্যাপটি তৈরির দাবি যেসব টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে করা হয়েছিল, গত এক সপ্তাহে টুইটার তার সবগুলো বন্ধ করে দেয়। তবে বেনামি ওই সব অ্যাকাউন্টধারী হুমকি দিয়েছে তারা আবার হাজির হবে। ভারতে অনলাইনে অপদস্থ করা নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গত বছরের এক রিপোর্টে বলা হয়, যেসব নারী যত বেশি সোচ্চার, তাঁরা তত বেশি টার্গেট হচ্ছেন। ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে যেমন সোচ্চার কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা বেশি করে টার্গেট হন, ভারতের ক্ষেত্রে ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং নিচু বর্ণের নারীরা বেশি অপদস্থ-অপমানের শিকার হন।
/আরএম